ইসলাম ধর্মে হজকে ফরজ করা হয়েছে যাদের আর্থিকভাবে ধনী তারা। হজ নিয়ে কুরআনের বহু আয়াতে নাজিল হয়েছে।সূরা আল ইমরানের একটি আয়াতের মাধ্যমে হজ ফরজ করা হয়েছে।
মুসলমান বোনেরা আমার, হজে যাওয়ার নিয়ত করলে অবশ্যই হজের মাসআলা-মাসায়েল, নিয়ম কানুন, ইবাদতের পদ্ধতি, মক্কা-মদিনায় করণীয় এবং হজে নিষিদ্ধ কার্যাবলী সম্পর্কে জেনে নেয়া আবশ্যক। মানুষ মাত্রই ভুল করে। তাই আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা ও আন্তরিক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ত্রুটিহীন হজ সম্পন্ন করা হয়তো সম্ভব হবে না।
আল্লাহ রহমানুর রাহিমের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে হজের ক্রিয়াকর্ম পালন করতে সচেষ্ট থাকব, আশা করি। কেননা হজ ও ওমরার আহকামের গাফেলতি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।তবে বাবা মারা গেলে, পৈতৃক সম্পদ ভাইদের কাছে থাকলেও সম্পদের মূল্য অনুপাতে হজ ফরজ হতে পারে।
মুসলিম মহিলাদের হজে যেতে যেহেতু সাথে একজন পুরুষ মাহরাম অবশ্যই থাকতে হয়; ওই মাহরামের স্বেচ্ছায় খরচ বহনের সঙ্গতি বা ইচ্ছা না থাকলে মহিলা দু’জনের খরচ বহন করে হজ সম্পাদন করবেন। স্বামী বা ছেলে বা মাহরাম স্বেচ্ছায় খরচ বহন করলে ভাগ্যের কথা।হজের প্রস্তুতি : হজের ধর্মীয় প্রস্তুতিতে পুরুষ-মহিলার পার্থক্য খুব সামান্যই। পবিত্র কাবার তাওয়াফে, মিনা-মুজদালিফা-আরাফাতে দোয়া দরুদ, এহরাম অবস্থায় করণীয় ও বর্জনীয় ইত্যাদিতে হজের আহকাম সবার জন্য এক।
তবে পোশাকের বেলায় এবং সা’ঈতে রমল করার ক্ষেত্রে পুরুষ মহিলায় কিছু পার্থক্য আছে। সাফা-মারওয়ার সা’ঈতে নির্ধারিত স্থানে পুরুষদের দ্রুতলয়ে হাঁটা কিন্তু মহিলাদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক। আবার এহরামের ক্ষেত্রে মহিলাদের পোশাক স্বাভাবিক কিন্তু পুরুষেরা মাত্র দুখণ্ড সেলাইবিহীন বস্ত্র পরিধান করেন। মহিলাদের পোশাকে বাধ্যবাধ্যকতা না থাকলেও সাদা পোশাক ও বোরখা থাকা বাঞ্চনীয়। তাদের মুখমণ্ডল কাপড়ে আবৃত করা যাবে না। (তবে মুখমণ্ডল পর্দা করতে চাইলে কাপড় যাতে মুখে না লাগে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।)
মানসিক প্রস্তুতি : বোনেরা, হজে যাওয়ার নিয়ত করে থাকলে প্রথম থেকেই হজবিষয়ক বই পুস্তক, হাদিস শরিফ, বিভিন্ন পুস্তিকা পড়ে জ্ঞান আহরণের চেষ্টা করা ভালো। ঘরের বাইরে মাসাধিকাল থাকতে হবে চিন্তা করে ওই সময়ের জন্য পরিবারের খাওয়া-দাওয়া, সন্তানদের লেখাপড়া, চিকিৎসা ইত্যাদির প্রয়াজনে একজন বিশ্বস্ত নিকটাত্মীয়কে রেখে যাওয়ার ব্যবস্থা করা উত্তম। বাকিটা আল্লাহর হাতে সোপর্দ করে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকবেন।পবিত্র মক্কার হেরেমে পুরুষ ও মহিলার নামাজে আলাদা ব্যবস্থা নেই।
কেননা পবিত্র কাবার তাওয়াফে যেহেতু পুরুষ-মহিলা এক সাথে শামিল হন নামাজের ক্ষেত্রেও প্রতিটি দরজা দিয়ে ঢুকে সামনে পুরুষ, পিছনে মহিলা অথবা স্বজনদের সাথে পুরুষ মহিলা পাশাপাশি নামাজ আদায় করে থাকেন। তবে মহিলারা চাইলে পার্টিশানের আড়ালে অন্য মহিলার সাথে পর্দা করে নামাজ আদায় করতে পারেন। নামাজ শেষে নিজ নিজ মাহরামের সাথে পূর্ব নির্ধারিত স্থানে মিলিত হবেন।
বর্তমানে মোবাইলের যুগে এক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।রাসূলুল্লাহ সা: বলেন ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ করল, তাতে অশ্লীল ও গুনাহের কার্যাদি থেকে বেঁচে থাকল, সে হজ থেকে এমতাবস্থায় ফিরে আসে যেন আজই মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছে। অর্থাৎ, জন্মের সময় শিশু যেরূপ নিষ্পাপ থাকে; সে-ও তদ্রুপ হয়ে যায়। (বুখারি, মুসলিম মাযহারি।)পর্দা পালন মহিলাদের জন্য নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতের মতই ফরজ। কাজেই মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের আশায়, বিগত জীবনের গুনাহ মাফের চেষ্টায় হজে গিয়ে আল্লাহর খাস এলাকা মক্কা-মদিনায় যাতে পর্দা ভঙ্গ না হয় সেদিকে অবশ্যই লক্ষ রাখা উচিত।
হজে নিষিদ্ধ বিষয় : হজে পালনীয় বিষয়ের পাশাপাশি নিষিদ্ধ বিষয় সম্পর্কে প্রত্যেকের অবগত থাকা উচিত। কেননা পবিত্র কুরআনে সূরা বাকারায় হজে করণীয় বিষয়াদি বর্ণনার পাশাপাশি এহরাম অবস্থায় বর্জনীয় বা নিষিদ্ধ বিষয়গুলোর উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ সূরায় ১৯৭ নম্বর আয়াতে হেদায়েত করা হয়েছে যে, হজের পবিত্র সময়ে ও পবিত্র স্থানগুলোকে প্রত্যেক হাজী সাহেব-সাহেবানদের নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করা উচিত। অধিকন্তু পবিত্র স্থানগুলোতে যেতে পারার সুবর্ণ সুযোগে আল্লাহর জিকর, এবাদত এবং সৎকাজে আত্মনিয়োগ করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ পাক আমাদের নেক আমল করার; বেশি বেশি দোয়া, ইস্তেগফার, ওমরা, তাওয়াফ ও অন্যের সেবা করার তাওফিক ও সুযোগ করে দিয়ে মাবরুর হজের সওয়ার অর্জনের সৌভাগ্য দান করুন।